Thursday, May 25, 2023

Tribute to John Walker



মোহাম্মদ মাকসুদুল হাসান ভূঁইয়া রাহুল


 সোনালি আলোর পথিকৃৎ

আগুনকে বন্দী রাখার বিশেষ এক বাক্সের দেখা মেলে বিশ্বের সব দেশেই, যাকে আমরা দিয়াশলাই বা ম্যাচবক্স বলি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই ম্যাচবক্স ব্যবহারের দেখা মেলে। 

আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত ম্যাচবক্স যেগুলো আমরা দেখি তা সাধারণত কাগজের তৈরি, যার মধ্যে বারুদ মিশ্রিত কাঠিগুলো রাখা থাকে। তবে প্রথম যখন ম্যাচবক্স আবিষ্কৃত হয় তখন এটি ছিল টিনের তৈরি কোটা। এই টিনের কোটার মধ্যে ম্যাচের কাঠিগুলো রাখা হতো। তবে এখনকার সময়ে শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশের ম্যাচবক্সগুলোই কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়, যার ভেতরে থাকে ম্যাচের কাঠি। 

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই চতুষ্কোণ আকৃতির ম্যাচবক্স বেশি দেখা যায়। তবে চতুষ্কোণ ছাডাও গোলাকার, ত্রিকোণাকার সহ নানান ডিজাইনের ম্যাচবক্স বা দিয়াশলাই রয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত ম্যাচবক্সের পাশাপাশি আলোচিত ব্যক্তিবর্গ বা বিশেষ কোনো বিষয়কে স্মরণ করে রাখার জন্যও ম্যাচবক্স তৈরি করা হয়। ম্যাচবক্সের মাধ্যমে একটি দেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে। দেশে দেশে বিভিন্ন আকৃতি ও ডিজাইনের ম্যাচবক্সের গায়ে নানা ধরণের ছবি ছাপা থাকে। এসব ছবিতে সেই সেই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, পরিবেশ, মানুষের চালচলন ইত্যাদির ধারণা পাওয়া যায়। এ কারণে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শখগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো 'দিয়াশলাই' সংগ্রহ!

ম্যাচবক্সের সঙ্গে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। প্রতিদিনই আলো কিংবা আগুনের উৎস তৈরিতে আমরা এর ব্যবহার করি। এখন কৌতুহল জাগতেই পারে, আগুনকে যিনি সর্বপ্রথম বাক্সবন্দী করলেন, কে তিনি? 

ম্যাচবক্স আবিষ্কারে যে মানুষটির কথা প্রথমেই আসে, তিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ রসায়নবিদ। ইংল্যান্ডের স্টকটন-অন-টিজ এলাকায় জন্ম তাঁর। তবে শুধু রসায়নশাস্ত্র নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায়ও তাঁর  উনার ব্যাপক আগ্রহ ছিল। তিনি ছিলেন অতি প্রজ্ঞাবান একজন ব্যক্তিত্ব, এজন্য তাঁকে 'স্টকটনের বিশ্বকোষ' ডাকা হতো!

১৮২৬ সালে তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন ঘর্ষণ পদ্ধতির ম্যাচ। শুরুর দিকে উনি টিনের কৌটায় ম্যাচ তৈরি শুরু করেন, এগুলো ছিল লেবেল বিহীন সরু বিশেষ কৌটা। প্রতিটি কৌটায় ১০০ টি করে কাঠি থাকতো। এসব কাঠির প্রান্তভাগে দাহ্য রাসায়নিক প্রলেপ দেয়া থাকতো আর আগুন জ্বালানোর জন্য থাকতো এক টুকরো বালু মিশ্রিত কাগজ। তবে ঘর্ষণ পদ্ধতির ম্যাচবক্সগুলোতে নিরাপত্তাজনিত কিছু ত্রুটি ছিল। অবশ্য বর্তমানে ঘর্ষণ পদ্ধতির ম্যাচবক্সের জায়গা নিয়েছে নিরাপদ ম্যাচবক্স। বিশ্বের সব দেশেই এখন নানান নকশার নিরাপদ ম্যাচবক্সের দেখা মেলে। 

একটি আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, প্রথম ম্যাচবক্স আবিষ্কারক সেই রসায়নবিদ তাঁর আবিষ্কৃত ম্যাচের পেটেন্ট করান নি। হয়তো তাঁর সরল মনে আবিষ্কারের কৃতিত্ব নেয়ার বিষয়টি কখনো আসেই নি! কিন্তু সরলতার বিপরীতে অতি চালাকির ঘটনা যুগে যুগেই ঘটে এসেছে! ম্যাচবক্সের আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি! স্যামুয়েল জোনস নামের এক ধূর্ত লোক  ম্যাচবক্সের আবিষ্কারকে নিজের নামে পেটেন্ট করিয়ে ফেলেন! এই লোক ১৮২৯ সালে 'লুসিফার' নামে ম্যাচবক্স আনেন! তার আনা এই ম্যাচবক্স ছিল মূল আবিষ্কারকের 'ঘর্ষণ' ম্যাচের হুবহু নকল!

তবে ইতিহাস থেকে সত্য মুছে ফেলা কি এতই সহজ? নিশ্চয়ই নয়। ম্যাচবক্সের আবিষ্কারকে পেটেন্ট করে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন স্যামুয়েল! কিন্তু মানুষ ঠিকই মনে রেখেছে প্রকৃত আবিষ্কারক সেই স্টকটনের রসায়নবিদকেই। 

ম্যাচবক্স শুধুমাত্র আগুন জ্বালানোর জন্য ব্যবহৃত কোনো বস্তু নয়, এই বাক্সবন্দী আগুন (ম্যাচবক্স) একটি নান্দনিক শিল্পসৃষ্টি! আর এই শিল্পের মূল স্রষ্টা হলেন ১৮৭১ সালের ২৯ মে জন্ম নেয়া সেই ব্রিটিশ রসায়নবিদ, যাঁর নাম জন ওয়াকার। শুভ জন্মদিন সোনালি আলোর পথিকৃৎ শ্রদ্ধেয় মি. ওয়াকার।

লেখক:
মোহাম্মদ মাকসুদুল হাসান ভূঁইয়া রাহুল
ম্যাচবক্স সংগ্রাহক।





No comments:

Post a Comment